Recent Post

6/recent/ticker-posts

হরিতকী ( ঔষধি গুনাগুণ )


 হরিতকী (ইংরেজি: black- or chebulic myrobalan) একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে এটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম  টাঙ্গাইল প্রভৃতি স্থানে বেশি পাওয়া যায়। হরিতকী ফল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং রন্ধনশিল্পে বহুল ব্যবহৃত ভেষজ ফল।

বিবরণ

হরীতকীর বৈজ্ঞানিক নাম টের্মিনেলিয়া চেব্যুলা (Terminalia chebula)। হরিতকী একটি বৃক্ষ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও ভারতে এর আদি নিবাস। ভারতবর্ষের বনাঞ্চলে বা গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এই গাছ দেখা যায়। উচ্চতা ৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ফেব্র‌ুয়ারি-মার্চ মাসে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজাতে থাকে। বাকল গাঢ় বাদামি। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা লম্বা-চ্যাপ্টা, কিনার চোখা, লম্বায় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি।

ফুল ফোটে ডালের শেষ প্রান্তে। রং হালকা হলুদাভ সাদা। ফল লম্বাটে, মোচাকৃতি। লম্বায় প্রায় দেড় ইঞ্চি। কাঁচা ফল সবুজ, পরিপক্ব ফল হালকা হলুদ। শুকালে কালচে খয়েরি রং হয়। ফলের ত্বক ভীষণ শক্ত। এই ফল বছরের পর বছর ভালো থাকে। ফলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা লম্বা পাঁচ-ছয়টি শিরা থাকে। ফলের বাইরের আবরণ কুঁচকানো। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলের ভেতর একটিমাত্র ভীষণ শক্ত বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

হরিতকী তিতা গন্ধ বিশিষ্ট। ইহা ট্যানিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্র‌ুকটোজ, সাকসিনিক অ্যাসিড এবং বিটা সাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ।

ব্যবহার

এ গাছের ফল-বীজ-পাতা সবই মানুষের উপকারে আসে । হরীতকীর কাঠ খুব মজবুত। এই কাঠ ফ্রেম, খুঁটি, আসবাব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মানুষের রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধক হিসেবে এই উদ্ভিদ বিশেষ কার্যকর। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। প্রচলিত আছে, প্রতি সকালে এক কাপ পরিমাণ হরীতকী ভেজানো পানি ব্যবহার করলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। আমলকী ও বিভীতকীর (বহেড়া) সঙ্গে হরিতকী ভেজানো পানি, সব রোগের আশ্চর্য মহৌষধ। আমলকী, হরিতকী ও বহেড়া এই তিন ফলের মিশ্রণকে ত্রিফলা বলে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য বহুমাত্রিক উপকারী। হরিতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে, পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম রোগ, ক্ষত রোগ, কনজাংটিভাইটিস রোগে হরীতকী ব্যবহৃত হয় বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে। ইহা রক্ত চাপ এবং অন্ত্রের খিঁচুনি হ্রাস করে। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। ইহা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই ইহা নতুন ও পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজন এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরিতকীতে এ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে ইহা রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ।

আগে চামড়ার ট্যানিংয়ের জন্য ও কাপড়ে রঙ করতে হরীতকীর ফল ব্যবহার করা হতো।


চিত্রশালা






Post a Comment

0 Comments

Ad Code